OH MUSLIM BROTHER!

KNOW THYSELF

হে মুসলিম ভাই!

নিজেকে জানো…

শাইখ ইবন আব্দুল্লাহ ফা: আ:


মাকতাবাতুল ইসলামিয়্যাহ


Pdf download links

http://bit.ly/2znZiWB

http://bit.ly/2yS40vA

সরাসরি ডাউনলোড করুন


অনলাইনে পড়ুন

প্রকাশকের কথা

আলহামদুলিল্লাহ! আমরা আল্লাহর শুকরিয়া জানাচ্ছি, বইটির কাজ সম্পূর্ণ ভাবে শেষ করতে পেরে এবং আপনাদের কাছে তা পৌছাতে পেরে। এ কাজটি আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারন, এর লেখক একজন কয়েদী। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি সবরের সাথে ত্বাগুতের কারাগারে নিজের যৌবন কাল অতিবাহিত করছেন। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি নিজের পিতা-মাতা-ভাই-বোন-বন্ধু-স্বজন থেকে দূরে অবস্থান করছেন। তাদেরকে দেখা থেকেও বঞ্চিত তিনি।

মাশাআল্লাহ! তিনি জেলের মধ্যেই অনেক গুলো গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেছেন। কিন্তু আমরা এখনো সব কালেকশন করতে পারিনি। এই বইটি তিনি পত্রাকারে আত্নীয়ের কাছে পাঠিয়েছেন। সেখান থেকে আমরা তা কালেকশন করে, আজ আপনাদের পর্যন্ত পৌছাতে পেরে অনেক আনন্দিত। আলহামদুলিল্লাহ।

এই বইটিতে তিনি আমাদের সমাজে প্রচলিত সবচেয়ে বড় কুফর নিয়ে অত্যন্ত সহজ-সরল ভাষায় ও সংক্ষেপে আলোচনা করেছেন। আশাকরি, বইটি পড়ে আপনারাও নিজেদের এই কুফর থেকে সতর্ক রাখতে পারবেন।

আর ওনার জন্যও দুআ করবেন, যেন আল্লাহ ওনাকে হিফাযতের সাথে ত্বাগুতের জেলখানা থেকে মুক্ত করে নিজের আপনজনদের কাছে নিয়ে আসেন।

হে আল্লাহ! আপনি দুনিয়ার সকল ত্বগুতের জেলখানা থেকে মু’মীন-মুজাহিদদের মুক্ত করুন আর আমাদের ইমাম মাহদীর সাথী হওয়ার তৌফিক দিন।

আমাদেরকে শিরক ও নিফাক থেকে হিফাযত রাখুন, আপনার অসন্তুষ্টি থেকে দূরে রাখুন।

ইয়া আল্লাহ! আমাদের কাজগুলো আপনি কবুল করে নিন এবং আখিরাতে আপনার সন্তুষ্টির ওসিলা বানিয়ে দিন। আমীন।

সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা, আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাহ আনতা, আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইক।                                                                        ২৩শে মুহাররাম, ১৪৩৯হিজরী।

১২ই অক্টোবর ২০১৭ঈসায়ী।



اَلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْنَ – اما بعد

তাওহীদের আহবানে…

উম্মতে মোহাম্মদীর মধ্যে সর্ব প্রথম যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর (তাওহীদের) আহবানে সাড়া দিয়েছিলেন এবং সকল মায়া মমতা, অমানুষিক নির্যাতন, দুনিয়ার লোভ লালসা, প্রবৃত্তির(নফসের) কামনাকে উপেক্ষা করে আমৃত্যু আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আদেশ-নিষেধ পালনে সন্তুষ্টচিত্তে সদা তৎপর থাকতেন।  সেই সব সাহাবায় কেরাম রাদিআল্লাহু আনহুমদের প্রধাণ একটি বৈশিষ্ট্য হল যা আল কোরআনে মূ’মীনদের গুণাবলী, সফলকামীদের গুণাবলী- এক কথায় জান্নাতীদের গুণাবলী বলা হয়েছে, তাহলোঃ

“শুনলাম এবং আদেশ মেনে নিলাম”

“শুনলাম এবং মানলাম”

তাফসীর সহ দেখুন সূরা আল বাক্বারা ২৮৪-২৮৬ এবং সূরা আন নূর ৫১

ইবলীশ শয়তানের মত অহংকার প্রদর্শন-পূর্বক অস্বীকার, কিংবা বাপ – দাদার আমল থেকে চলে আসা রসম-রেওয়াজ বা প্রথার দোহাই অথবা পরিবার-পরিজন, ঘর-বাড়ি, সম্পদের মোহ কিংবা ক্ষমতা শক্তিধরদের রক্তচক্ষু ও নির্যাতনের ভীতি বা নফসের কামনা কোন কিছুই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আদেশ-নিষেধ পালন থেকে তাদের বিরত রাখতে পারেনি।

এ গুনাবলীর ফলশ্রুতিতেই অর্ধেক বিশ্বে “কালিমার পতাকা” প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, অর্ধশতকেরও কম সময়ে। যার সুফল মুসলিম-অমুসলিম আপামর জনসাধারন ভোগ করেছিল ধরা পৃষ্টে শত শত বৎসর। সে সমাজে যাকাত নেওয়ার মত দরিদ্রখুজে পাওয়া যেত না। মা-বোনদের ইজ্জতের উপর হামলা অমাবস্যার রজনীতেও কেউ আশংকা করত না। দোকান-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা বাড়ী তালাবদ্ধ না থাকলেও দিবানিশি কখনো চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজির নিরাপত্তাহীনতায় কেউ ভীত হত না। শাসক বা ধনবানের স্বজনেরাও অন্যায় করলে শাস্তি বিনা রেহাই পেত না। এটা এমন এক সমাজ ছিল, যেখানে মানুষ মানুষের দাসত্ব নয়, বরং সকল মানুষ এক আল্লাহর দাসত্ব করত। যার ফলে অন্য সকল গোলামী, দাসত্ব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন হয়ে, এক আল্লাহর বান্দা, সবাই সমান হিসেবে জীবন যাপন করত।

রাষ্ট্র, সমাজ, আদালত, অর্থব্যবস্থা সকল কিছুই শুধু মহান আল্লাহর বিধান (code) মোতাবিক পরিচালিত হত। কোন মানব রচিত বিধান দ্বারা নয়।

 

ব্যক্তি জীবনের আক্বীদাহ-

ইবাদাতের ক্ষেত্রে যেমন তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিধান মেনে চলতেন, ঠিক তেমনি রাষ্ট্র, সমাজ, আদালত, অর্থবানিজ্য তথা মানব জীবনের সকল ক্ষেত্রে, সকল স্তরে”  এর গুনাবলীতে সিক্ত হয়ে জীবন যাপন করতেন আর তাওহীদের মূল মন্ত্রও তাই।

মানব জীবনের সকল স্তরে সকল ক্ষেত্রে এক আল্লাহর আইন বিধান পালন করা, আখিরাতে মুক্তি এবং দুনিয়ায় শান্তি পেতে হলে আবারো উজ্জীবিত হয়ে মুসলিম ভাইদের জীবনের সকল পর্যায়ে তাওহীদকে প্রতিষ্ঠিত (establish) করতে হবে। মনে রাখবেন, ইসলাম আল্লাহর মনোনীত দ্বীন একটি পূর্ণা-ঙ্গ ও পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা।(Islam is the complete code of life)। দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত এ ব্যবস্থার আলোকে একজন মুসলিমকে জীবন যাপন করতে হয়। এখন যে বা যারা এ কথাবলির সাথে একমত এবং ” গুণাবলী অর্জন করে সাহাবায়ে কেরামের মত আমৃত্যু জীবন-যাপন করতে চান, যা সাফল্যের একমাত্র চাবি, তাদের জন্যেই বাকী কলমের কালির লেখা।

একটি বিষয় মনে রাখবেন…

মানব রচিত মতবাদ বা আইন-বিধান পরিবর্তনশীল, ত্রুটিপূর্ণ, স্বার্থদুষ্ট, পক্ষপাতপুষ্ট আর অসীম মহাজ্ঞানী সকলের স্রষ্টা মহান আল্লাহর আইন-বিধান (code) নির্ভূল, সঠিক, স্বজনপ্রীতি মুক্ত এবং কিয়ামাত পর্যন্ত চূড়ান্ত। রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন আদর্শ বা মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য বর্তমান বিশ্বে যে কয়টি মানব রচিত রাজনৈতিক মতবাদ প্রচলিত আছে, তন্মধ্যে democracy – গণতন্ত্র হচ্ছে অন্যতম। গণতন্ত্র ও ইসলামী রাষ্ট্র-ব্যবস্থার মধ্যে বিরাট ব্যবধান রয়েছে।

এ আলোচনার সাথে সংশ্লিষ্ট একটি বিষয় আগে পরিষ্কার হওয়া দরকার। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মতে, রাষ্ট্র ৪টি উপাদানের সমষ্টি। যথাক্রমেঃ

১. জনসমষ্টি

২. নির্দিষ্ট ভূখন্ড

৩. সরকার

৪. সার্বভৌমত্ব

ইসলামী রাষ্ট্র সার্বভৌমত্ব ব্যতীত বাকী ৩টি স্বীকার করে। কিন্তু সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে না। কারন আধুনিক রাষ্ট্র বিজ্ঞানের মতে “সার্বভৌমত্ব” হচ্ছে রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত- সকলের উপর স্থাপিত এক অপ্রতিহত ক্ষমতা। ইহা রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত প্রত্যেক প্রজার উপর শাসন করার ও বশ্যতা আদায় করার সীমাহীন ক্ষমতা। সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের সে বিশেষত্ব যার ফলে রাষ্ট্র নিজের ইচ্ছা ব্যতীত অন্য কোন কিছু মেনে নিতে বা অপর কারো নিকট আইনত দায়ী হতে পারে না। এই ক্ষমতার কারনে অন্য কোন শক্তিই রাষ্ট্রের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে না। সার্বভৌমত্ব থাকার কারনেই রাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ সকল ব্যাপারে অগাধ কর্তৃত্ব করার অধিকারী হয়ে থাকে। অনুরুপভাবে এ কারনেই রাষ্ট্র উচ্চতর বা বাহিরের সকল শক্তির অধীনতা বা নিয়ন্ত্রণ হতে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকে।

(এ বিষয়ে আরো জানতেঃ গ্রন্থঃ ইসলামী রাজনীতির ভূমিকা/মাও. আব্দুর রহীম পড়ুন)

পক্ষান্তরে, ইসলামী রাষ্ট্রনীতিতে এই সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহ তা’আলার জন্য নির্দিষ্ট।

তাঁর উচ্চতর প্রভূত্ব, একচ্ছত্র মালিকানা এবং নিরংকুশ শাসন-ক্ষমতা সকল দিক থেকেই অখন্ড, অবিভাজ্য এবং অংশীদার-হীন সারা বিশ্বের প্রতিটি বস্তুই আল্লাহর একচ্ছত্র প্রভূত্তে অনুগত হয়ে আছে। কুরআন মজিদে আল্লাহ বলেনঃ

  • “আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্ব আল্লাহরই।” (সূরা আশ শূরা:০৪)
  • “তাঁর সার্বভৌমত্বে কোন অংশীদার নাই।” (সূরা বানী ইসরাঈল:১১১)

শাসন ক্ষমতা ও আইন রচনা এবং প্রভূত্বের নিরংকুশ অধিকার একমাত্র আল্লাহ তা’আলার। কোন ব্যক্তি, মানুষ, পার্লামেন্ট বা কোন রাজ শক্তি তাঁর অংশীদার হতে পারে না।

মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

“হুকুম তো আল্লাহ তা’আলারই।” (সূরা আনআম:৫৭)

চূড়ান্ত হুকুম ও বিধানদাতা একমাত্র তিনিই। এক্ষেত্রে তাঁর কোন শরীক নেই। আল্লাহ স্বাধীন-সার্বভৌম সত্ত্বার অধিকারী। তিনি অন্য কারো কাছে জবাবদিহি করতে, অন্য কারো আনুগত্য করতে, বশ্যতা করতে বাধ্য নন। মহান আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীন বলেন-

“তিনি যা ইচ্ছা তাই করেন।” (সূরা বুরুজ:১৬)

তাঁর উপর কোনরুপ বাধ্যবাধকতা নেই। যেমন: মহান আল্লাহ বলেন:

“তিনি যা করেন, সে বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হবে না।” (সূরা আম্বিয়া:২৩)

মোট কথা হচ্ছে, আল্লাহ তা’আলাই একমাত্র সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী এবং তা অখন্ড, অভিজ্য, অংশীদারহীন এবং সর্বাত্নক এটাই তাওহীদের মূলমন্ত্র। এ আক্বীদা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অত্যাবশ্যক।

 

পশ্চিমাদের democracy:

এবার আসুন পশ্চিমাদের ডিক্টেটরশিপের হাতিয়ার, যার ধূয়া তুলে তারা মুসলিম বিশ্বে ইসলামী শারীয়াহ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যকে সুকৌশলে প্রতিহত করছে। সেই democracy গনতন্ত্র অর্থ হচ্ছে জনগনের শাসন বা কর্তৃত্ব। “গনতন্ত্র এমন এক ধরনের শাসন ব্যবস্থা। যে শাসন ব্যবস্থা সমাজের অধিকাংশের মতে পরিচালিত হয়।” আধুনিক কালের শ্রেষ্ঠ রাষ্ট্র চিন্তাবিদ লর্ড ব্রাইস গনতন্ত্র সম্পর্কে বলেন-

“যে শাসন প্রথায় জনসমষ্টির অধিকাংশের মতে শাসন কার্য পরিচালিত হয়, তাই গনতন্ত্র।”

A government in which the will of the majority of the citizens rules

গনতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় ধর্ম নিছক একটি ব্যক্তিগত ব্যাপার। ব্যক্তিগতভাবে এতে ধর্মীয় বিশ্বাস ও আচার-অনুষ্ঠানের স্বাধীনতা স্বীকৃত। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে মানুষ হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। এই নীতিতে রাষ্ট্রীয় ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন কর্তৃত্ব হয় না। বরং তথা কথিত মানুষরাই মনগড়া সংবিধান প্রণয়ন করে।

গনতন্ত্রের দৃষ্টিতে মানুষ তথা জনগনই সমস্ত ক্ষমতার উৎস। জনমতই সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। আইন রচনাকারী তারাই। মানুষের ঊর্ধ্বে এমন কোন উচ্চতর সত্ত্বা এখানে স্বীকৃত নয়। যার বিধান পালন করতে মানুষ বাধ্য। কাজেই ভাল-মন্দ, কল্যাণ ও অকল্যাণ, এমন কি বৈধ ও অবৈধ তথা হালাল-হারাম ইত্যাদি বিধানও অধিকাংশের মতে নির্ধারণ করা হয়। যেমন: আমাদের মাতৃভূমিতেই ইসলামী শরীয়াতে আল্লাহ হারাম করা সত্ত্বে পার্লামেন্টে অধিকাংশ জনপ্রতিনিধির রায়ে বা ভোটে সুদ, মদ, জুয়া, লটারী পতিতালয় এর বৈধতা দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশের ভোটে আল্লাহর হারামকে গনতন্ত্রের জোরে হালাল বা বৈধ বলে ঘোষনা করা হয়েছে।

জেলা উপজেলা ভিত্তিক লাইসেন্সকৃত মদের পাট্টা, বড় শহরে ক্লাব, বার আছে। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ২০০১ সনের হিসাব মতে ২ লক্ষ ৪০ হাজারেরও বেশী লাইসেন্সকৃত পতিতা (যৌনকর্মী) আছে এদেশে। সমাজের শান্তি ও নিরাপত্তা বিনষ্টকারী এসব অবৈধ বিষয়গুলো অনুমোদন পেয়েছে গনতন্ত্রের উর্বর জমির কল্যাণেই।

Secularism (ধর্মনিরপেক্ষবাদ), nationalism (বর্ণ, ভাষা, অঞ্চল, গোত্র ভিত্তিক জাতীয়তা) এর মত কুফরী মতবাদ গনতন্ত্রের উপর ভর করে কোটি মুসলিমের দেশে, সংসদে পাশ হয়েছে।

 

একটু খেয়াল করুন….

মহাজ্ঞানী আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা কুরআন মাজীদে তা ১৪৩৪ বৎসর পূর্বেই কত সুন্দর ভাবে তাঁর নবীকে সতর্ক করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন:

“আর যদি আপনি পৃথিবীর অধিকাংশ লোকের কথা মেনে চলেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে পথভ্রষ্ট, বিচ্যুত করে দেবে। কেননা এরা নিছক  অনুমানের উপর ভিত্তি করেই চলে।”(সূরা আন’আম:১১৬)

মহান আল্লাহ বলেছেন,

অধিকাংশ লোকের কথা মত চললে, তারা আল্লাহর পথ থেকে পথভ্রষ্ট করে দিবে।

আর এর ঠিক বিপরীত হচ্ছে গনতন্ত্রের মূলনীতি।

“অধিকাংশ লোকের মত অনুযায়ী আইন, বিধান,নেতা নির্বাচন করা হয়।

বেশি দূরে যাওয়া লাগবে না। নিজ দেশের দিকে নজর দিন…. অধিকাংশের মতে আল্লাহর পথ দ্বীন ইসলাম থেকে কিভাবে বিচ্যুত করে হারামে লিপ্ত হওয়ার সহজ সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। বৈধতা, লাইসেন্স দিয়ে (মদ, জুয়া, লটারী, পতিতালয়) কিছু ক্ষেত্রে বাধ্য করা হচ্ছে হারাম মানার জন্য। (কোরআন বিরুধী আইন-বিধান মানার জন্য, সুদ, gp ফান্ড, বড় ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যাংক একাউন্ট বাধ্যতামূলক, ব্যাংক লোন বাধ্যতামূলক শিল্প ব্যবসা, বীমা ইত্যাদি।) কিভাবে পথভ্রষ্ট করে আল্লাহর পথ থেকে সরানো হচ্ছে এই কুফরী মতবাদকে প্লাটফর্ম হিসাবে ব্যবহার করে। ওহে মুসলিম ভাই-বোন! বুঝেছেন কি? কখন হুশ হবে আমাদের???

আরেকটি বিষয়….

গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় যেহেতু অধিকাংশ জনমতই বা ভোটাধিক্যই হল মূল। এ কারনে সংখ্যাগরিষ্টের রায়ে যে কোন ব্যক্তি রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারে। চাই সে মূর্খ, অনভিজ্ঞ, সুদখোর, চরিত্রহীন বা বেদ্বীনই হোক।

গনতন্ত্রের মূল থিউরী হচ্ছে…

 

“Government of the people by people for the people.
মানুষের উপর মানুষের দ্বারা পরিচালিত মানুষের কল্যাণে শাসন।”

পক্ষান্তরে, (ইসলামী শরীয়াহ মোতাবিক) দ্বীনই ইসলাম রাষ্ট্র ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। মানব কল্যাণের উদ্দেশ্যে দ্বীন ইসলামকে গ্রহণের আহবান জানায় ইসলামী রাষ্ট্র বিশ্ববাসীকে। তবে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য কাউকে জবরদস্তি করা যাবে না, তা নিষেধ।

ইসলামী রাষ্ট্র খিলাফাত ও শূরার (পরামর্শ)ভিত্তিতে পরিচালিত হয়।

সকল বিধি-বিধানের মূল উৎস হলো “আল কোরআন ও সুন্নাহ।” এখানে ঐ জনমতই গ্রহণযোগ্য হবে। যা কোরআন ও সুন্নাহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এতদুভয়ের পরিপন্থি কোন মত ইসলামী রাষ্ট্রে গ্রহণযোগ্য নয়।

ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী যে সব বিষয় বা জিনিস বৈধ বা অবৈধ হিসাবে গন্য। কারো পক্ষে এর ব্যতিক্রম করার ইখতিয়ার নেই।

 

কুফর

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক আনীত বিষয়াদি যা অকাট্যভাবে দ্বীনের অংশ বলে প্রমাণিত এসবের কোন একটি বিষয়কে অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করা কে কুফরী বলে। (কাওয়াইদুল ফিকহ)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর নাযিলকৃত আল কোরআনের কোন আয়াত বা পেশকৃত কোন নীতি অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান করাও কুফরী। সুতরাং উল্লেখিত আয়াত সমূহের দিকে দৃষ্টিপাত করুন। দেখবেন, গণতন্ত্রের মূলনীতি কোরআনের মূলনীতির বিপরীত।

১. সকল ক্ষমতার উৎস এবং

২. অধিকাংশ জনগনের মতে চলা।

সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায এর একটি পুস্তিকায় আছে, যার নাম হল, “গনতন্ত্র কুফর, গনতন্ত্রী কাফির।”

জর্ডানের প্রখ্যাত আলেম শাইখ আবু মুহাম্মাদ আসিম আল মাকদিসী হাফিযাহুল্লাহ বলেছেন, “গনতন্ত্র শুধু কুফরই নয়, গনতন্ত্র একটি জীবন ব্যবস্থা, একটি দ্বীন।”

মিশরের প্রখ্যাত আলেম, মুজাহিদ সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ রহীমাহুল্লাহ milestone নামক গ্রন্থে গনতন্ত্রের সমালোচনা করেছেন মানব রচিত মতবাদের অসাড়তা দেখিয়ে। ৭০ দশকের প্রখ্যাত আলেম OIC ফিকাহ একাডেমীর দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র সদস্য, উনার “সুন্নাহ ও বিদআত” গ্রন্থে স্পষ্ট বলেছেন, “গনতন্ত্র কুফরী মতবাদ”

এছাড়াও হক্কানী উলামারা এ বিষয়ে সবাই একমত যে, “গনতন্ত্র কুফরী মতবাদ”

 

সাবধান….

খেয়াল রাখবেন! ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। সুতরাং কোনমানব রচিত পদ্ধতিতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার ধৃষ্টতা থেকে বিরত থাকা উচিত মুসলিমদের।

ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে হবে ইসলামী পদ্ধতিতে।

কোরআনী শাসন কায়েম, কোরআনী পদ্ধতিতে করতে হবে।

অন্য কোন মনগড়া পদ্ধতিতে নয়।

কুরআনী সেই সঠিক পদ্ধতি যা মহান রব আল্লাহ নির্ধারিত করে দিয়েছেন, তা যতই কঠিন হোক, অপছন্দনীয়-কষ্টকর হোক, তাই নির্ভুল, সঠিক এবং চূড়ান্ত।

মানবরচিত ঠুনকো, অসার, গনতান্ত্রিক মতবাদ বা পদ্ধতির অবলম্বন পরিহার করতে হবে। আজ বিশ্বের দিকে নজর বুলিয়ে দেখুন।

গনতান্ত্রিক (জনমতের, জনসমর্থনের)পদ্ধতিতে তুরস্কে ইসলামী AKP Party আজ দুইবারেরও বেশী সময় শাসন ক্ষমতায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ তো দূরের কথা, আংশিক ইসলামী বিধানও কায়েম করতে পারেনি। ১৯৪৭ সালের মুসলিমলীগ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্যই ছিল ইসলামী শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করা। আজ পাকিস্তান পৃথক একটি  স্বাধীন দেশ এবং অনেকগুলো ইসলামী দলও আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইসলামী আইন প্রতিষ্ঠা হয়নি।

এবার নজর দেয়া যাক আরব বসন্তে….

আরব বসন্তের পশ্চিমা নীল নকশা যে রাষ্ট্রে প্রথম শুরু এবং সফল হয়, সেই তিউনিসিয়া সেখানে “এন্নেহাদা” নামে ইসলামী পার্টি ক্ষমতায় যায়। প্রথমে যদিও শরীয়াহ কায়েমের কথা বলেছিল, কিন্তু পরবর্তীতে উনারা বিবৃতি দিয়েছেন, যেহেতু জনগনের রায়ে “এন্নেহাদা” ক্ষমতায় আসীন। তাই অধিকাংশ জনগনের মতের বাহিরে তারা আইন, সংবিধান প্রণয়ন করবেন না।

অতএব, ওহে মুসলিম ভাই!

সূরা আনফাল এবং সূরা বাকারার অর্থ সহ তাফসীর দেখুন। আল্লাহর নির্দেশিত পদ্ধতির উপর নিজেদের সসীম জ্ঞানের কৌশল, হিকমাত, বুদ্ধির স্পর্ধা না দেখিয়ে তাঁর জীবন বিধান তাঁরই নির্দেশিত পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠার মহান কাজে জান-মাল কুরবানী করে, মহান আল্লাহর বর্ণিত “সফলকাম” দের অন্তর্ভুক্ত হোন।

“হে আল্লাহ! আপনার দ্বীনের পথে আমাদের কবুল করে নিন। আমীন। আমীন।

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সতর্কবানী…

হাদীসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“সাবধান!  অচিরেই কোরআন ও শাসন ব্যবস্থা আলাদা হয়ে যাবে। তখন তোমরা কোরআন থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না।

সাবধান! নিশ্চয়ই অচিরেই এমন শাসকরা হবে, যারা তোমাদেরকে শাসন করবে। যদি তোমরা তাদেরকে মেনে চলো, তাহলে তারা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে। আর যদি তোমরা তাদেরকে অমান্য কর, তাহলে তারা তোমাদেরকে হত্যা করবে।”

তখন বর্ণনাকারী সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন,

“তখন আমরা কি করব? ”

তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,

“তোমরা তাই করবে যা করেছিলেন ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথীগন, তাদেরকে করাত দিয়ে চিড়ে দ্বিখন্ডিত করা হয়েছিল এবং শূলে চড়িয়ে হত্যা করা গিয়েছিল।

মনে রাখবে, আল্লাহর নাফরমানী করে বেঁচে থাকার চেয়ে আল্লাহর আনুগত্য করে মৃত্যু বরণ করা উত্তম। (সহীহ বাইহাক্বী)

 

হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম …

আবু ‍হুরাইরা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“যখন তোমাদের শাসনগন হবে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তিগন এবং তোমাদের ধনী লোকগন হবে দানশীল এবং তোমাদের সকল কাজ হবে পরামর্শের ভিত্তিতে, তখন যমীনের নীচের অংশ থেকে উপরের অংশ উত্তম তোমাদের জন্য।

আর যখন তোমাদের শাসকরা হবে তোমাদের মধ্যে নিকৃষ্ট প্রকৃতির। ধনীরা হবে কৃপণ এবং তোমাদের কর্ম সম্পাদনের দায়িত্ব তোমাদের নারীদের উপর অর্পিত হবে, তখন যমীনের উপরের অংশের চেয়ে নীচের অংশ উত্তম তোমাদের জন্য।” (মুসনাদে আহমাদ)


হে মুসলিম ভাই! নিজেকে জানো… (গনতন্ত্র নিয়ে এক আসীর ভাইয়ের সংক্ষিপ্ত নোট)