সংক্ষিপ্ত ভাবে ঈমানের রুকন সমূহের ব্যাখ্যা



ঈমান কি?

ঈমান হলঃ তুমি,

১. আল্লাহ তাআলা

২. তাঁর ফিরিশতাগন

৩. তাঁর কিতাব সমূহ

৪. তাঁর প্রেরিত রাসূলগন

৫. শেষ দিনের প্রতি (আখিরাত)

৬. ভাগ্যের ভাল মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে।    [মুসলিম]

 

ঈমান সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন,

যে আল্লাহ তাআলাকে, তাঁর ফিরিশতাদেরকে, তাঁর কিতাব সমূহকে এবং তাঁর রাসূলগনকে ও কিয়ামাত দিবস কে অস্বীকার করবে, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে।” [সূরা আন নিসাঃ১৩৬]

ঈমান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আল কুরআনের এই আয়াত গুলো অধ্যয়ন করতে পারেনঃ সূরা আল-বাক্বারার ১৭৭, ২৮৫ নাম্বার আয়াত সহ আরও অসংখ্য আয়াতে ঈমানের দলীল রয়েছে।

ঈমানের সংজ্ঞাঃ

  • তা মুখে বলা,
  • অন্তরে বিশ্বাস করা ও
  • বাস্তবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে প্রকাশ করা।

 

মুখের মাধ্যমে ঈমানের প্রকাশঃ

যেমনঃ যিকির, দু, কাজের আদেশ, অস কাজের নিষেধ, সত্যবাদীতা, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি।

 

অন্তরে ঈমানের প্রকাশঃ

যেমনঃ স্রষ্টা, প্রতিপালক, পরিচালক, ইবাদাতের অধিকারী এবং সুন্দরতম নাম ও মহান গুনাবলীর ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার (তাওহীদ) একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করা। আল্লাহকে ভালবাসা, ভয় করা। একমাত্র আল্লাহর ওপর ভরসা করা, তাঁর কাছে চাওয়া। সব কাজ শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করা।

 

বাস্তবে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে প্রকাশ করাঃ

যেমনঃ নামায, রোযা, হাজ্জ, যাকাহ, হিজরাহ, আল্লাহর পথে জিহাদ, দ্বীনি ইলম অর্জন ইত্যাদি।

ঈমান কি বাড়ে – কমে?

হ্যাঁ,

  • ঈমান আনুগত্যের মাধ্যমে বৃদ্ধি পায় এবং
  • নাফরমানী ও অবাধ্যতায় হ্রাস পায়।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

আর যখন তাদের নিকট তাঁর আয়াত পঠিত হয়, তখন তাদের ঈমান বৃদ্ধি পায়।

সূরা আল-আনফাল  – আয়াত:০২

 

ঈমানের রুকন সমূহঃ

 

প্রথম রুকন বা স্তম্ভঃ মহান আল্লাহর প্রতি ঈমানঃ

নিম্নে বর্ণিত বিষয় সমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ঈমান আনা হয়ঃ

প্রথমতঃ এই ঈমান রাখা যে, এই বিশ্ব জগতের একজন প্রভূ, প্রতিপালক রয়েছেন।

  • তিনিই হলেন সমগ্র সৃষ্ট-জগতের একমাত্র রিযিক্বদাতা, জীবনদাতা, মৃত্যুদাতা, কল্যান ও অকল্যাণ সাধনকারী।
  • তিনি যা ইচ্ছা তা করেন।
  • তিনি যাকে ইচ্ছা সম্মান দেন, আবার যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন।
  • তাঁরই হাতে আসমান জামীনের রাজত্ব।
  • তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, আর সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী।
  • আদেশ-নিষেধ করার অধিকার একমাত্র তাঁর।
  • মানবজাতি, জীন জাতি ও ফিরিশতা মন্ডলী সহ সকল সৃষ্ট জীব তাঁরই দাস বা বান্দা।
  • সকল আইন-বিধান দেয়ার অধিকার একমাত্র তাঁরই।
  • এ সকল বৈশিষ্টের তিনিই একমাত্র অধিকারী, তাঁর কোন শরীক নেই।

এসব গুনাবলী আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সাথে সম্পর্কিত ও সাব্যস্ত করা হারাম।

 

দ্বিতীয়তঃ

এই ঈমান রাখা যে, আল্লাহ তা’আলা তাঁর সুন্দর নাম সমূহ ও পূর্ণ গুনাবলীর ক্ষেত্রে এক ও অদ্বিতীয়।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সূরা আল আরাফ এর ১৮০ নাম্বার আয়াতে বলেছেন,

আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সর্বোত্তম নাম। অতএব সেই সব নাম ধরে তাঁকে ডাক।

 

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি ইহা সংরক্ষন করবে সে জান্নাতে যাবে।

[বুখারী, মুসলিম]

 

এই আক্বীদা হ দু’টি বড় মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিতঃ

 

১ম. আল্লাহর নাম পরিপূর্ণ গুনাবলীর প্রমাণ করে, সৃষ্টি জীবের কোন কিছুই তাঁর মত ও তাঁর অংশীদার হতে পারে না।

২য়. নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা সকল দোষ-ত্রুটি মুক্ত, সম্পূর্ণ ভাবে পুত-পবিত্র যেমন- নিদ্রা, অপারগতা, মূর্খতা ও জুলুম-অত্যাচার ইত্যাদি।

  • আল্লাহ তা’আলা নিজের জন্য যে সকল গুন অস্বীকার করেছেন, তা অস্বীকার করা অপরিহার্য।
  • আল্লাহ তা’আলা নিজের জন্য যে সকল গুন অস্বীকার করেছেন, সে গুনের বিপরীত গুনে তিনি পরিপূর্ণ ভাবে গুনান্বিত, এই বিশ্বাস রাখা।

সুতরাং যখন আল্লাহকে তন্দ্রা ও নিদ্রা থেকে মুক্ত করব, তখন তন্দ্রার বিপরীত চির জাগ্রত এবং নিদ্রার বিপরীত চিরঞ্জীব পরিপূর্ণ ২টি গুনকে সাব্যস্ত করা হবে।

আল্লাহর নাম, তাঁর গুন ও কর্ম সমূহের প্রতি ঈমান আনা, আল্লাহ ও তাঁর ইবাদাতকে জানার একমাত্র পথ।

কারণ আল্লাহ তা’আলা এই পার্থিব জগতে তাঁর সরাসরি দর্শনকে সৃষ্টিজীব হতে গোপন রেখেছেন এবং তাদের জন্য এমন জ্ঞানের পথ খুলে দিয়েছেন, যার দ্বারা তারা তাদের প্রভূ-ইলাহ-মা’বূদকে জানবে এবং সঠিক জ্ঞান অনুযায়ী তাঁর ইবাদাত করবে।

 

তৃতীয়তঃ  একমাত্র আল্লাহকে এক ইলাহ মানা

 এই বিশ্বাস রাখা যে, আল্লাহ তা’আলাই একমাত্র সত্যিকার মা’বুদ বা ইলাহ এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যাবতীয় ইবাদাত পাওয়ার অধিকার রাখেন। তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শরীক নেই।

মহান আল্লাহ বলেন,

তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করবে এবং ত্বাগুত [আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদাত করা] থেকে নিরাপদ ও বিরত থাকবে। [সূরা আন-নাহল-৩৬]

 

দ্বিতীয় রুকনঃ ফিরিশতাগনের প্রতি ঈমান

 

(১)ফিরিশতাদের পরিচয়ঃ

  • তারা নুরের তৈরি।
  • তারা আল্লাহর অনুগত।
  • তারা দিন রাত্রি আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনায় রত।
  • কখনো ক্লান্ত হন না।
  • তাদের সংখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না।
  • আল্লাহ তাদেরকে বিভিন্ন প্রকার কাজের দায়িত্ব অর্পন করেছেন।
  • তারা কখনো আল্লাহর অবাধ্য হন না।

 

 

ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান আনা

ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান আনা, ঈমানের ৬টি রুকনের মধ্যে ২ নাম্বার রুকন। ফিরিশতাদের প্রতি ঈমান আনা ব্যতীত কোন ব্যক্তির ঈমান সঠিক ও গ্রহনযোগ্য হবে না। তাঁদের উপর ঈমান আনা ওয়াজিব।

কুরআনে আল্লাহ যেসব ফিরিশতাদের কথা উল্লেখ করেছেন, যারা তাদের বা তাঁদের আংশিকের অস্তিত্বকে অস্বীকার করবে তারা কুফরী করলো।

আল্লাহ বলেন,

যে আল্লাহ তাআলাকে, তাঁর ফিরিশতাদেরকে, তাঁর কিতাব সমূহকে এবং তাঁর রাসূলগনকে ও কিয়ামাত দিবস কে অস্বীকার করবে, সে পথভ্রষ্ট হয়ে বহু দূরে গিয়ে পড়বে।” [সূরা আন নিসাঃ১৩৬]

 

ফিরিশতাদের যে বিষয়ের উপর ঈমান আনতে হবেঃ

  • তাদের অস্তিত্ব স্বীকার করা।
  • তারা আল্লাহর সৃষ্ট জীব।
  • তাদেরকে আমরা দেখি না।
  • মুহাম্মাদ [সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] জিবরাঈল [আলাইহি ওয়া সাল্লাম] -কে তাঁর প্রকৃত আকৃতিতে দু’বার দেখেছেন।
  • কিছু সাহাবী কিছু ফিরিশতাদেরকে মানুষের আকৃতিতে দেখেছেন।
  • তাদের পানাহার প্রয়োজন হয় না।
  • তারা নিজস্ব আকৃতি ছাড়া অন্য আকৃতি ধারণ করতে পারেন।
  • আল্লাহ তাদেরকে তাঁর ইবাদাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন।
  • আল্লাহ তাদেরকে যে সম্মান দিয়েছেন, তাদেরকে সেই সম্মান দেওয়া।
  • প্রত্যেক মুসলমানের ‍উপর ওয়াজিব যে, ফিরিশতাদের সম্পর্কে জানা ও ঈমান রাখা।
  • ফিরিশতাদের গালি দেওয়া, মর্যাদা ক্ষুন্ন করা ও তাদেরকে নিয়ে হাসি তামাশা করা হারাম।
  • ফিরিশতারা যা অপছন্দ করেন তা থেকে দূরে থাকা। কারন আদম সন্তানরা যাতে কষ্ট পায়, তারাও তাতে কষ্ট পায়।

 

তৃতীয় রুকনঃ কিতাব সমূহের প্রতি ঈমান

 

ঈমানের ৩য় রুকন হল আল্লাহর কিতাবসমূহের উপর ঈমান আনা। সূরা আল হাদীদ এর ২৫ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেনঃ

“আমি আমার রাসূলগনকে সুস্পষ্ট নিদর্শন সহ প্রেরণ করেছি এবং তাদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও মীযান (মানদন্ড) যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে।”

 

কিতাব সমূহের যে বিষয়ের উপর ঈমান আনতে হবেঃ

  • আল্লাহর অসংখ্য কিতাব রয়েছে।
  • একমাত্র আল্লাহ ছাড়া এর সংখ্যা কেউ জানেনা।
  • তিনি এগুলো তাঁর রসূলগনের (আলাইহিমুস সালাম) উপর নাযিল করেছেন।
  • এগুলো হল আল্লাহর বানী, মানবজাতির জন্য জ্যোতি ও হিদায়াত স্বরুপ। এ কিতাবগুলো নাযিল হয়েছে যাবতীয় সৎকর্ম ও ইবাদাত একমাত্র আল্লাহ তা’আলার নিমিত্তে সম্পাদনের মাধ্যমে তাঁর তাওহীদ (একত্ববাদ) বাস্তবায়ন এবং পৃথিবীতে শিরক ও অন্যায় অনাচার দূরীভূত করার জন্য।
  • আল্লাহর সকল কিতাবের উপর ঈমান আনা। যে ব্যক্তি কিতাব সমূহ অথবা এর কিছুকে অস্বীকার করবে সে কাফির হয়ে যাবে। [এর অর্থ এ নয় যে, বর্তমানে আহলে কিতাবদের (ইয়াহুদী ও খৃষ্টানদের) নিকট যে কিতাব রয়েছে তা গ্রহণ করবো। কারণ তা ‍বিকৃত করা হয়েছে এবং কুরআন নাযিলের মাধ্যমে রহিত করা হয়েছে।]
  • কুরআনে বর্ণিত আদেশ-নিষেধের অনুসরন করা ও সে অনুযায়ী আমল করা ওয়াজিব।
  • আল কুরআন পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়ন ও সংরক্ষনকারী, রহিতকারী।
  • কুরআন আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ আসমানী কিতাব।

 

 

চতুর্থ রুকনঃ রসূলগনের প্রতি ঈমান

এটি ঈমানের রুকনসমূহের মধ্যে একটি, যার প্রতি ঈমান আনা ছাড়া কোন মুসলমানের ঈমান পরিপূর্ণ হবে না।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলগনকে অস্বীকার করে তারা আল্লাহ ও রসূলগনের প্রতি বিশ্বাসে তারতম্য করতে চায় আর বলে যে, আমরা কতককে বিশ্বাস করি ও কতককে অস্বীকার করি এবং এরাই মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে এরাই সত্য অস্বীকারকারী, তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছি অপমানজনক শাস্তির।

[সূরা আন নিসাঃ১৫০-১৫১]

 

 

রসূলগনের প্রতি ঈমান আনা মানেঃ

  • এই বিশ্বাস রাখা যে আল্লাহর অনেক রসূল রয়েছেন, যাদেরকে তিনি রিসালাত প্রচার করার জন্য নির্বাচন করেছেন।
  • যারা তাঁদেরকে অনুসরন করবে, তারা হিদায়াত পাবে।
  • আর যারা তাঁদেরকে অনুসরন করবে না, তারা পথভ্রষ্ট হবে।
  • আল্লাহ যে সকল রসূলদের নাম আমাদের কাছে উল্লেখ করেছেন, আর যাদের নাম উল্লেখ করেননি তাঁদের সকলের প্রতিই আমাদের ঈমান আনতে হবে।
  • সকল নাবী রাসূলই ইসলামের দাওয়াহ দিতেন। যদিও তাঁদের শারীআত ও বিধি-বিধান ভিন্ন ছিল, কিন্তু তাঁরা সকলেই মূলনীতিতে এক ছিলেন, তাহলো তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ।
  • নাবী-রসূলগন গায়েব জানেন না, তাঁরা আমাদের মতই মানুষ। কিন্তু আল্লাহ তাঁদেরকে তাঁর দ্বীন প্রচার করার জন্য মনোনয়ন করেছেন। আল্লাহ তাঁদেরকে যা অবগত করান তা ব্যতীত কোন ইলমে গাইব তাঁরা জানেন না।
  • সকল নাবী (আলাইহিমুস সাল্লাম)তাঁদের রবের নিকট জীবিত।
  • আল্লাহ জমিনের জন্য নাবীদের লাশ ভক্ষন কে হারাম করে দিয়েছেন। [আবু দাউদ, নাসায়ী]
  • মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
  • রাসূলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও সর্ব শেষ নাবী,
  • মুত্তাকীনদের ইমাম,
  • আদম সন্তানের সরদার,
  • মাকামে মাহমুদ ও হাউযে কাওছার এর মালিক
  • শেষ দিবসে সমস্ত সৃষ্টি জীবের সুপারিশকারী,
  • আল্লাহ তাঁর উম্মাতকে সর্ব উত্তম উম্মাত রুপে এই পৃথিবীতে মানুষের কল্যাণের জন্য পাঠানো হয়েছে।
  • সৃষ্টির দিক দিয়ে তাঁরা সর্ব শেষ উম্মাত আর
  • হাশরের ময়দানে তাঁরা সর্ব প্রথম উম্মাত।

 

যা থেকে বিরত থাকতে হবে:

  • তাঁর মানহানী করা,
  • তাঁকে তুচ্ছ জানা,
  • তাঁর ব্যাপারে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা,

ইসলাম হতে মুরতাদ (বের হয়ে যাওয়া) হওয়া ও আল্লাহর সাথে কুফুরী করা।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেনঃ

আপনি বলুনঃ তোমরা কি আল্লাহর সাথে তাঁর হুকুম আহকামের সাথে এবং তাঁর রসূলদের সাথে ঠাট্টা বিদ্রুপ করেছিলে? ছলনা কর না, তোমরা যে কাফির হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর।

[সূরা আত তাওবাহঃ৬৫-৬৬]

  • তবে
  • তাঁকে আহবান করা,
  • তাঁর কাছে ফরিয়াদ করা,
  • তাঁর কবরের পাশ দিয়ে ত্বাওয়াফ করা,
  • তাঁর নামে নজর মানা, পশু জবেহ করা বৈধ নয়।

এ সকল কাজ আল্লাহর সাথে শরীক করার নামান্তর।

পঞ্চম রুকনঃ শেষ দিবসের প্রতি ঈমান

শেষ দিবসের প্রতি ঈমান আনা ঈমানের ৫ম রুকন। যার প্রতি ঈমান আনা ছাড়া কোন বান্দার ঈমান পরিপূর্ণ হবে না।

এই ঈমান রাখা যে,

  • দুনিয়ার জীবন ক্ষনস্থায়ী, মৃত্যুর মাধ্যমে এ শেষ হয়ে যাবে এবং কবরের জীবন থেকে নতুন এক জীবন শুরু হবে যার নাম ‘বারযাখ’।
  • তাকে কবরে পুনরায় জীবিত করা হবে এবং রব, নাবী ও দ্বীন সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।
  • কবরে সত্যবাদী মু’মিনদের শান্তি দেয়া হবে,
  • আর যালিমদের আযাব দেয়া হবে,
  • এভাবে এক সময় কিয়ামাত সংঘটিত হবে,
  • “আল্লাহর আদেশে ইসরাফিল আলাইহিস সালাম শিংগায় দু বার ফুৎকার দিবেন। প্রথম ফুৎকারে সবাই বেহুশ হয়ে যাবে,
  • অতঃপর আল্লাহ হালকা বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, বৃষ্টি হতে মানুষের দেহ তৈরী হবে।
  • তারপর দ্বিতীয় ফুৎকারে সবাই পুনরায় জীবিত হবে।” [মুসলিম]
  • তারপর পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলকে একত্রিত করা হবে।
  • সবার হিসাব-নিকাশ নেয়া হবে এবং প্রত্যেককেই স্ব স্ব কর্মের প্রতিদান দেয়া হবে।
  • একদল জান্নাতী হবে, অপর দল জাহান্নামী হবে।
  • যে ব্যক্তি শেষ দিবসকে অস্বীকার করবে সে কাফির হয়ে যাবে।
  • শেষ দিবসের পূর্বে কিয়ামাতের যে সকল আলামত সংঘটিত হবে তার প্রতি ঈমান আনা, যে গুলি সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন।

 

আলামাত গুলো কি কি?

আলিমগন এ আলামাতকে দু’ভাগে বিভক্ত করেছেনঃ

১. ছোট আলামাতঃ

যা কিয়ামাত নিকটে বুঝায়, এর সংখ্যা অনেক। অধিকাংশ সংঘটিত না হলেও অনেক সংঘটিত হয়ে গেছে। যেমনঃ

  • নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে প্রেরণ,
  • আমানতের খিয়ানাত,
  • মাসজিদ অধিক মাত্রায় সাজ সজ্জা ও তা নিয়ে গর্ভ করা,
  • সময় নিকটবর্তী হওয়া,
  • আমল কমে যাওয়া,
  • ফিৎনা ফাসাদ প্রকাশ পাওয়া,
  • অধিক হত্যা হওয়া,
  • ব্যভিচার ও অন্যায় কাজ অধিক মাত্রায় হওয়া।
  • ইমাম মাহদীর আগমন,
  • কুরআন জমিন হতে আকাশে তুলে নেওয়া হবে,
  • সুস্থ ও সচ্ছল লোকদের মাল প্রদান করা হবে,
  • চতুষ্পদ জানুয়ারের সংখ্যা বেড়ে যাবে,

 

২. বড় আলামাতঃ

যা কিয়ামাতের পূর্ব মুহুর্তে সংঘটিত হবে এবং কিয়ামাতের ব্যাপারে সতর্ক করবে। এমন আলামাত ১০টি রয়েছে। একটিও প্রকাশিত হয়নি। যেমনঃ

১. ধোঁয়া বের হবে, তা হল আকাশ হতে প্রচন্ড ধোঁয়া নেমে এসে সকল মানুষকে ঢেকে নিবে।

২.দাজ্জালের আগমন,

৩.এক অদ্ভুত চতুষ্পদ জন্তু বের হবে,

৪.পশ্চিম দিক হতে সূর্য ওঠা

৫.ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অবতরন,

৬.ইয়াজুজ-মা‘জুজদের আগমন,

৭.তিনটি ভূমি কম্প-একটি পূর্বে

৮.আর একটি পশ্চিমে,

৯.আর একটি জাজিরাতুল আরবে,

১০.ইয়ামান হতে আগুন বের হয়ে মানুষদেরকে হাশরের মাঠের দিকে নিয়ে যাবে। [মুসলিম]

বর্ণিত আছে যে, ঐ নিদর্শন গুলো পর্যায়ক্রমে সংঘটিত হবে, একটি সংঘঠিত হওয়ার পর পরই অপরটি সংঘটিত হবে। এ দশটি নিদর্শন সংঘটিত হওয়ার পর পরই আল্লাহর আদেশে কিয়ামাত সংঘটিত হবে।

 

কিয়ামাত বলতে কি বুঝায়?

যে দিন মানুষ আল্লাহর আদেশে কবর হতে বের হবে, হিসাব-নিকাশের জন্য, অতঃপর সকর্মশীলদের জান্নাত ও অস কর্মশীলদের জাহান্নাম দেয়া হবে। [সূরা আল-মাআরিজ, আয়াত-৪৩]

এ দিনের একাধিক নাম কুরআনুল কারীমে উল্লেখ হয়েছে।

 

আমাদেরকে আরো যে সবের উপর ঈমান আনতে হবে তাহলোঃ

  • হাউযে কাওসার, যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেয়া হয়েছে।
  • মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শাফায়াত।
  • হাশরের ময়দানে সর্ব প্রথম হিসাব নেয়া হবে উম্মাতে মুহাম্মাদীর।
  • সর্বপ্রথম হিসাব নেয়া হবে সালাতের।
  • মানুষের মধ্যে সর্ব প্রথম ফায়সালা করা হবে রক্তপাতের।
  • মুত্তাকীদের হিসাব নিকাশ হল, শুধুমাত্র তাদের নিকট তাদের আমলনামা পেশ করা হবে। যাতে তারা তাদের উপর আল্লাহর অনুগ্রহ বুঝতে পারে, যা তিনি তাদের নিকট হতে দুনিয়াতে গোপন রেখেছিলেন।
  • তাদের হাশর হবে তাদের ঈমান অনুপাতে।
  • আর কাফিরদের হিসাব নিকাশ হবে অত্যন্ত কঠিনভাবে। শুক্ষ্ণ প্রত্যেকটি ছোট বড় কর্মের।
  • তাদেরকে তাদের মুখের উপর টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে ফেলা হবে।
  • আমাদেরকে আরো ঈমান আনতে হবে মীযানের উপর।এর উপর ঈমান আনা ওয়াজিব। আল্লাহ এটি কিয়ামাত দিবসে স্থাপন করবেন, বান্দাদের আমল মাপার ও তাদের কাজের প্রতিদান দেয়ার জন্য।
  • আমাদের পুলসিরাতের উপরও ঈমান আনতে হবে। আর তা হলো
  • জাহান্নামের পিঠের উপর স্থাপিত পুল।
  • এটি ‍চুলের চাইতে সূক্ষ্ণ আর তরবারীর চাইতে ধারালো।{মুসলিম}
  • এর উপর দিয়ে মানুষ জান্নাতের দিকে অতিক্রম করবে। কেউ অতিক্রম করবে বিজলীর ন্যায়, কেউবা বাতাসের ন্যায়, কেউবা পাখির ন্যায়, কেউবা মুসাফিরের ন্যায়। সকলেই চলবে তাদের কর্মের ফলাফল অনুপাতে।{মুসলিম}
  • যে ব্যক্তি পুলসিরাত অতিক্রম করতে পারবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
  • মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর উম্মাত এই পুল সর্ব প্রথম অতিক্রম করবেন। {মুসলিম}
  • সেদিন শুধু নাবী রাসূলরা কথা বলবেন, তাঁরা বলবেন, ‘হে প্রভূ! মুক্তি দাও, মুক্তি দাও।’{মুসলিম}
  • যাদেরকে গ্রেফতার করার আদেশ দেয়া হয়েছে তাদের কে গ্রেফতার করা হবে।{মুসলিম}
  • অতঃপর কিছু আহত হয়ে মুক্তি পাবে, আর কিছু চাপাচাপি করে জাহান্নামে পড়ে যাবে।{মুসলিম}
  • আল-কানত্বারাহর উপর আমাদের ঈমান আনতে হবে।

-মু‘মিনেরা পুল সিরাত অতিক্রম করে কানত্বারাতে অবস্থান করবে।

– এটি হল জান্নাত-জাহান্নামের মধ্যবর্তী স্থান,

-এখানে ঐ সকল মু‘মিনদেরকে দাড় করানো হবে, যারা পুল সিরাত অতিক্রম করে এসেছে এবং জাহান্নাম হতে মুক্তি পেয়েছে, জান্নাতে যাওয়ার পূর্বে একে অপরের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণের জন্যে।

-অতঃপর তাদের পরিশুদ্ধির পর জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।{বুখারী}

 

  • জান্নাত-জাহান্নাম

আমরা ঈমান রাখবো যে, জান্নাত-জাহান্নাম সত্য। জান্নাত হল অতিথীশালা, যা আল্লাহ মুত্তাকীনদের জন্য তৈরী করে রেখেছেন। সেখানে আছে প্রবাহিত নদী, উন্নত ও সুউচ্চ কক্ষ, হুর (সুন্দরী, কুমারী, চিরযুবতী, যাদেরকে কখনো কোন ইনসান বা জ্বিন স্পর্শ করেনি) ইত্যাদি। তথায় আরো আছে মনঃপূত-মনোহর সামগ্রী যা কোন দিন কোন চক্ষু দেখেনি, কোন কর্ন শ্রবন করেনি, আর কোন মানুষের অন্তরেও কোন দিন কল্পনায় আসেনি। জান্নাতবাসীদের নি’আমাত শেষ ও ঘাটতি হবে না, আর জান্নাতের সুগন্ধী চল্লিশ বৎসর দূরত্বের রাস্তা হতে পাওয়া যায়। জান্নাতে মু‘মিনদের জন্য সব চাইতে বড় নি’আমাত হলো আল্লাহকে সরাসরি স্বচক্ষে দেখা। জান্নাতে একশতটি ধাপ রয়েছে, এক ধাপ হতে অপর ধাপের দূরত্ব আসমান হতে জমিনের দূরত্ব অনুরূপ। আর সবচেয়ে উন্নত ও উত্তম জান্নাত হলো, ‘জান্নাতুল ফিরদাউস’। এর ছাদ হলো আল্লাহর আরশ। আর জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে, প্রত্যেক দরজার পার্শের দৈর্ঘ ‘মক্কা’ হতে ‘হাজার’ এর দূরত্বের সমান। আর জান্নাতে নূন্যতম মর্যাদার অধিকারী যে হবে তার দুনিয়া ও আরো দশ দুনিয়ার পরিমান জায়গা হবে। জান্নাতের নি’আমাত চিরস্থায়ী। {সূরা আল বায়্যিনাহঃ৮}

 

জাহান্নামঃ

এটি হলো জেল খানা, যা আল্লাহ কাফির ও অবাধ্যদের জন্য তৈরী করে রেখেছেন। সেখানে বিভিন্ন প্রকার শাস্তি রয়েছে। তাদের পাহারাদার হবে নিষ্ঠুর ও নির্দয় ফিরিশতারা।

 

আর জাহান্নামীদের মধ্যে যার ব্যাপারে আল্লাহ চিরস্থায়ী শাস্তির ফায়সালা করেছেন, তার শাস্তি কখনো বিরত ও শেষ হবে না্। তারা সেখানে চিরস্থায়ী থাকবে।{সূরা আল আহযাবঃ৬৫} তাদের খাদ্য হবে যাক্কুম (কাঁটা যুক্ত,তিক্ত ফল) আর পানীয় হবে পূজঁ, দুনিয়ার আগুনের তাপ জাহান্নামের আগুনের তাপ মাত্রার সত্তর ভাগের এক ভাগ মাত্র। জাহান্নামের সাতটি দরজা হবে।

 

 

ষষ্ঠ রুকনঃ ভাগ্যের প্রতি ঈমান

 

১) ভাগ্যের সংগাঃ

আল্লাহর অনন্ত জ্ঞান ও হিকমাত অনুযায়ী সৃষ্টি কূলের জন্য ভাগ্য পূর্ব নির্ধারিত। ভাগ্যের প্রতি ঈমান আনা আল্লাহ তা’আলার রুবুবীয়াতের অন্তর্ভুক্ত। এর উপর ঈমান আনা ছাড়া কারো ঈমান পরিপূর্ণ হবে না।

 

২. ভাগ্যের স্তরঃ

চারটি স্তর বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভাগ্যের প্রতি ঈমান আনা পরিপূর্ণ হবেঃ

১ম. আল্লাহর অনন্ত জ্ঞানের প্রতি ঈমান আনা, যা সকল বস্তুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে।

“তুমি কি জাননা যে, নিশ্চয় আল্লাহ অবগত যা কিছু আসমান ও জমিনে রয়েছে, নিশ্চয়ই ইহা কিতাবে লিখিত আছে আর নিশ্চয় ইহা আল্লাহর নিকট সহজ।” {সূরা আল হাজ্বঃ৭০}

 

২য়ঃ লাউহে মাহফুজে আল্লাহর ইলম মোতাবিক ভাগ্য সমূহ লিখা আছে।

সূরা আল আনআমের ৩৮ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

“আমি কোন কিছু লিখতে ছাড়িনি।”

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

“আসমান-জমিন সৃষ্টির ৫০ হাজার বৎসর পূর্বে আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টি জীবের ভাগ্য সমূহ লিখে রেখেছে।” {মুসলিম}

 

৩য়ঃ সব কিছু একমাত্র আল্লাহর ইচ্ছায় হয়।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

“জগত সমূহের প্রভূ আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে অন্য কিছুই ইচ্ছা করতে পার না।” {সূরা আত তাকভীরঃ২৯}

এক ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেছিলঃ ‘আল্লাহ এবং আপনি যা চেয়েছেন।’

তিনি বলেন, “তুমি কি আমাকে আল্লাহর সমকক্ষ বানিয়ে দিলে বরং তিনি একাই চেয়েছেন।” {আহমাদ}

 

৪র্থঃ নিশ্চই আল্লাহ সকল বস্তুর সৃষ্টি কর্তা এই ঈমান রাখা

“আল্লাহ সকল কিছুর স্রষ্টা এবং তিনি সব কিছুর অভিভাবক।” {আয-যুমারঃ৬২}

 

৩. ভাগ্যের প্রকারভেদঃ
 ভাগ্য ৪ প্রকারেরঃ

ক. সকল সৃষ্ট জীবের সাধারন ভাগ্য লিপিবদ্ধকরণঃ আর এটিই আসমান জমিন সৃষ্টির ৫০হাজার বৎসর আগে লাউহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।

খ. সারা জীবনের ভাগ্য লিপিবদ্ধকরণঃ

আর তাহলো বান্দার মাঝে রুহ বা আত্না ফুকেঁ দেওয়ার সময় হতে তার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত যা কিছু সংঘটিত হবে নির্ধারন করা।

গ. বাৎসরিক ভাগ্য লিপিবদ্ধকরণঃ

লাইলাতুল ক্বদরে প্রত্যেক বৎসরে যা কিছু সংঘটিত হবে তা নির্ধারন করা হয়। সূরা আদ দুখানের ৪ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।”

ঘ. দৈনন্দিন ভাগ্য লিপিবদ্ধকরণঃ

আর তা হলো সম্মান, অপমান, কিছু দেওয়া না দেওয়া, জীবন দান, মৃত্যু দান ইত্যাদি যা দৈনন্দিন সংঘটিত হবে, তা নির্ধারন করা।

“আসমান-জমিনের বিচরনশীল সকলেই তাঁর কাছে প্রার্থী, প্রত্যেকদিন (সময়) কোন না কোন কর্মে রত রয়েছেন।” {আর রাহমান-২৯}

 ৪.ভাগ্যের ব্যাপারে সালাফদের আক্বিদাহ হলঃ

-নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা, প্রভূ, মালিক। -আল্লাহ সকল সৃষ্টজীবকে সৃষ্টির পূর্বেই তাদের ভাগ্য লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন।

-তাদের বয়স, রুযী, কর্ম সমূহ নির্ধারন করে রেখেছেন।

-প্রত্যেক জিনিসই স্পষ্ট কিতাবে হিসাব করে রেখেছেন। -আল্লাহ যা চান তা হয়, আর যা চান না তা হয় না।

-আর যা হয়েছে ও হবে তা সবই জানেন।

-আর যা হয় নাই, যদি তা হতো কিভাবে হতো তাও জানেন।

-আর তিনি প্রত্যেক বস্তুর উপর ক্ষমতাশীল।

-যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন।

-যাকে ইচ্ছা তাকে পথভ্রষ্ট করেন।

-তবে বান্দার ইচ্ছা ও শক্তি রয়েছে, যা দ্বারা তাদেরকে যে সকল কাজের সামর্থবান করেছেন তা সম্পাদন করে, এই বিশ্বাস রেখে যে, ‘আল্লাহ যা চান শুধুমাত্র তাই হয়।’

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সূরা আনকাবূত এর ৬৯ নাম্বার আয়াতে বলেন,

“যারা আমার পথে জিহাদ করে আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করবো।”

-আল্লাহ বান্দার ও তার কর্মের সৃষ্টিকর্তা আর বান্দারা এই কর্মগুলো প্রকৃতপক্ষে সম্পাদনকারী।

৫. বান্দাদের কর্ম সমূহঃ

যে সকল কাজ আল্লাহ তা’আলা এই নিখিল বিশ্বে সৃষ্টি করেনে তা দু’ভাগে বিভক্তঃ

১ম. যে সকল কর্ম আল্লাহ তা’আলা পরিচালনা করেন তাতে কারো কোন প্রকার ইচ্ছা ও ইখতিয়ার নেই। বস্তুর সকল ইচ্ছা আল্লাহর জন্য। যেমনঃ জীবিত করা, মৃত্যু দান করা, সুস্থ্য-অসুস্থ্য করা।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

“আর আল্লাহই তোমাদের ও তোমাদের কর্ম কে সৃষ্টি করেছেন।” {সূরা আস-সাফ্ফাতঃ৯৬}

 

২য়ঃ যে সকল কর্ম সৃষ্ট জীব সম্পাদন করে থাকে

তা সবই ইচ্ছার সাথে সম্পর্কিত। আর এটি সম্পাদনকারীর ইখতিয়ার ও ইচ্ছায় সংঘটিত হয়, কারন এটি আল্লাহ তাদের উপর অর্পন করেছেন।

সূরা আত-তাকভীরের ২৫ নাম্বার আয়াতে তিনি বলেন,

“যে তোমাদের মধ্যে সোজা পথে চলতে চায়।”

তিনি আরো বলেন,

“অতএব যার ইচ্ছা হয় ঈমান আনুক এবং যার ইচ্ছা কুফরী করুক।” {সূরা আল-ক্বাহাফঃ২৯}

ভাল কাজ সম্পাদনের জন্য মানুষ প্রশংসার হক্বদার, আর খারাপ কাজ করার জন্য তারা অপমানের হক্বদার। আল্লাহ শুধুমাত্র ঐ কাজ করার জন্য শাস্তি দিবেন, যাতে বান্দার পূর্ণ ইখতিয়ার রয়েছে।

মানুষ ইচ্ছা ও নিরুপায়ের পার্থক্য জানে যেরূপ: কেউ ছাদ হতে সিড়ি বেয়ে নিজ ইচ্ছায় অবতরন করেন, আর কখনো কেউ তাকে ছাদ হতে ফেলে দিতে পারে। প্রথম উদাহরন হল ইচ্ছায় আর দ্বিতীয় উদাহরন হল নিরুপায়ের।

 

৬. আল্লাহর সৃষ্টি ও বান্দার কর্মের মাঝে সমঝোতাঃ

আল্লাহ বান্দাকে সৃষ্টি করেছেন ও তার কর্মসমূহকে সৃষ্টি করেছেন। ও তাকে ইচ্ছা ও শক্তি দিয়েছেন। তাই বান্দাই প্রকৃত পক্ষে তার কর্মের সম্পাদন কারী।

অতঃপর সে যদি ঈমান আনে তবে সে তার ইচ্ছায় ঈমান আনলো। আর যদি সে কুফরী করে তবে সে তার ইচ্ছায়, নিজের মর্জিতে কাফির হল।

যেমন আমরা বলে থাকি যে, এই ফল এই গাছের আর এই ফসল এই ক্ষেতের। এর অর্থ হলোঃ নিশ্চয় এই ফল এই গাছ হতে উৎপন্ন হয়েছে, আর আল্লাহর দিক থেকে এর অর্থ হবেঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ একে এই গাছ হতে সৃষ্টি করেছেন। এই দু অর্থের মধ্যে কোন প্রকারের বিরোধ নেই।

 

৭. ভাগ্যের ব্যাপারে বান্দার করণীয় কাজ হল দু’টিঃ

১মঃ আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা

আল্লাহর কাছে যেসব বিষয়ে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবেঃ

  • কল্যাণকর কাজ সম্পাদনের
  • সতর্কিত কাজ থেকে বেঁচে থাকার জন্য
  • সহজ সাধ্য কাজ আরো সহজ করে দেয়ার জন্য
  • কঠিন কাজ হতে বিরত রাখার

অতঃপর কল্যাণ অর্জনের জন্য ও অকল্যাণ বর্জনের জন্য আল্লাহর নিকটই মুখাপেক্ষী হবে এবং তাঁর উপর ভরসা করবে ও তাঁর কাছে আশ্রয় চাইবে।

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

“তোমরা কল্যাণকর কাজের প্রতি আগ্রহবান হও, আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর, আর অপারগতা প্রকাশ করনা। আর তুমি যদি কোন কষ্টের সম্মুখীন হও তবে এই রূপ বলনা যে, ‘আমি যদি এই কাজ করতাম তাহলে এই হত। বরং বল যে, “‘ক্বদ্দারুল্লাহ ওয়ামা শা-আ ফাআ’লা’-(আল্লাহ যা নির্ধারন করেছেন ও চেয়েছেন তাই চেয়েছেন)”।

কারণ (লাউ)যদি কথাটি শাইত্বানের কর্ম খুলে দেয়।’”

{মুসলিম}

২য়. ধৈর্য ধারণঃ

বান্দা তার জন্য নির্ধারিত বিষয়ের উপর ধৈর্য ধারণ করবে। অতঃপর জানবে যে, নিশ্চয়ই এ আল্লাহর পক্ষ হতে, সুতরাং সন্তোষ্ট চিত্তে মেনে নিবে। যে বিপদ তাকে আক্রমণ করেছে তা ভুল করে আসেনি। আর যে বিপদ আক্রমণ করেনি তা তার জন্য আসার ছিল না।

 

৮. ভাগ্য ও ফায়সালার প্রতি সন্তুষ্ট থাকাঃ

প্রত্যেক মু‘মিনের জন্য ভাগ্যের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা অপরিহার্য। কারন আল্লাহর ফায়সালা সবচেয়ে উত্তম ও হিকমাতপূর্ণ। কারন আমাদের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত সবই আল্লাহর জানা।

সুতরাং যার আস্থা থাকবে যে, তার জীবনে যে সুখ বা দুঃখ এসেছে তা আসারই ছিল, এতে কারো কোন হাত নেই। আর যা তার জীবনে আসেনি তা আসার ছিলনা। অতএব এসব ক্ষেত্রে সে অহেতুক পেরেশানী ও সন্দেহ হতে বেঁচে থাকবে। চলে যাওয়া বা হারিয়ে যাওয়া বস্তুর জন্য চিন্তিত হবেনা। আর ভবিষ্যত নিয়ে ভয়েও থাকবে না। আর সব চাইতে বড় বিষয় হলো, সে আত্নার দিক দিয়ে পুতঃপবিত্র থাকবে। সে উপলব্ধি করতে পারবে যে, তার বয়স সীমিত, রুযী পরিমিত, কাপুরুষতা বয়স বাড়াতে পারে না, কার্পন্নতা রুযী বাড়াতে পারে না। সবই লিখিত রয়েছে। সে বিপদ-আপদে ধৈর্য্য ধারন করবে, নিজ গুনাহর জন্য আল্লাহর নিকট মাফ চাইবে। আল্লাহর আদেশের আনুগত্য করতে সক্ষম হবে। আর আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারন করেছেন তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকবে।

 

সূরা আত তাগাবুনের ১১ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

“আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন প্রকার বিপদ আসেনা, এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, আল্লাহ তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করবেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।”

তিনি অন্যত্র বলেন,

“অতএব আপনি ধৈর্য্য ধারন করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। আপনি আপনার পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।” {সূরা গাফিরঃ৫৫}

 

৯. হিদায়াতের অর্থ দুটিঃ

প্রথম অর্থ হলোঃ সত্যের সন্ধান দেয়া, সৎপথ প্রদর্শন করা। সকল সৃষ্ট জীব, সকল রাসূল ও তাঁদের অনুসারীগর এর মালিক।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন,

“নিশ্চয়ই আপনি সরল পথ প্রদর্শন করেন।”{সূরা আশ শুরাঃ৫২}

 

দ্বিতীয় অর্থ হলোঃ

আল্লাহ কর্তৃক বান্দাদেরকে ভাল কাজের তৌফিক প্রদান করা ও সঠিক পথে অটল রাখা, আর এটি মুত্তাক্বীন বান্দাদের জন্য দয়া ও রহমত স্বরূপ। আর এ হিদায়াতের একমাত্র মালিক হলেন আল্লাহ।

আল্লাহ তা’আলা বলেন,

“আপনি যাকে ভালবাসেন, তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না, তবে আল্লাহ তা’আলাই যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনয়ন করবেন।”{সূরা আল-ক্বসাসঃ৫৬}

 

১০. কুরআনে বর্নিত ইরাদা ২ প্রকারঃ

১ম. ইরাদা কাউনিয়া ক্বাদারিয়া

তাহলো সকল সৃষ্টিকূলের জন্য নির্ধারিত ঘটনীয় ইচ্ছা, সুতরাং আল্লাহ যা চান তা হয়, আর যা চান না তা হয় না। আর এটি (ইরাদা কাউনিয়া ক্বাদারিয়া) অবশ্যই পতিত হবে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সূরা আনআম এর ১২৫ নাম্বার আয়াতে বলেন,

“আল্লাহ যাকে হিদায়াত করার ইচ্ছা করেন, তার বক্ষকে ইসলামের জন্য খুলে দেন।”

২য়. ইরাদা দ্বীনিয়া শারয়ীয়া

তাহলো ধর্মীয় নির্দেশ বা উদ্দেশ্য ও তার আহল অনুসারীকে ভালবাসা ও তাদের প্রতি সন্তোষ্ট থাকা। ইরাদা দ্বীনিয়া শারয়ীয়া বাস্তবায়িত হবে না, যতক্ষন পর্যন্ত এর সাথে ইরাদা কাউনিয়া সংযুক্ত না হবে।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সূরা আল-বাক্বারার ১৮৫ নাম্বার আয়াতে বলেন,

“আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান, তোমাদের জন্য কঠিনতা চান না।”

 

১১. ভাগ্যের বিষয়টি আল্লাহর সৃষ্টজীবের মাঝে তাঁর একটি রহস্যময় বিষয়ঃ

ভাগ্য নির্ধারন আল্লাহর গোপন রহস্য, তাঁর সৃষ্টি জীবের মাঝে এ কথাটি শুধুমাত্র ভাগ্যের গোপন দিকের জন্য প্রযোজ্য। কারন সকল জিনিসের হাকীকাত শুধুমাত্র আল্লাহ জানেন। মানুষ তা অবগত হতে পারেনা। যেমনঃ আল্লাহ হিদায়াত করেন, পথভ্রষ্ট করেন, মৃত্যু দেন, জীবন দেন ইত্যাদি।

যেমন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

“যখন ভাগ্যের কথা স্মরণ হবে তখন তোমরা তা নিয়ে তর্ক বিতর্কে লিপ্ত না হয়ে চুপ থাকবে। {মুসলিম}

তবে ভাগ্যের অন্যান্য দিক ও তাঁর মহা হিকমাত স্তর, মর্যাদা ও তাঁর প্রভাব মানুষের নিকট ব্যাখ্যা করা ও তাদেরকে জানানোর বৈধতা আছে।

১২.ভাগ্যের দ্বারা দলীল দেওয়াঃ

ভবিষ্যতে কি হবে না হবে এই সম্পর্কে আল্লাহ ব্যতীত আর কারোরই জানা নেই।

আর যে বিষয়ে ফায়সালা হয়ে গেছে তার উপর ভরসা করে কর্ম ত্যাগ করা ঠিক নয়।

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

“তোমরা কর্ম সম্পাদন করতে থাকো, যাকে যার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে তা তার জন্য সহজ সাধ্য হবে, সুতরাং যারা সৌভাগ্যবান হবে তাদেরকে সৌভাগ্যবান ব্যক্তিদের যে কাজ সেই কাজ তার জন্য সহজ করে দেওয়া হবে।

আর যারা দূর্ভাগ্যবান হবে তাদেরকে দূর্ভাগ্যবান ব্যক্তিদের যে কাজ সেই কাজ তার জন্য সহজ করে দেওয়া হবে।

অতঃপর নিম্নের আয়াত পাঠ করলেনঃ

অতএব, যে দান করে এবং আল্লাহ ভীরু হয়, এবংউত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে, আমি তাকে সুখের বিষয়ের জন্য সহজ পথ দান করব। আর যে কৃপনতা করে ও বেপরোয়া হয় এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে, আমি তাকে কষ্টের বিষয়ের জন্য সহজ পথ দান করব।” {সূরা আল-লাইলঃ৫-১০}

 

১৩.ঐ সকল ‘আসবাব’ বা কারন সমূহ যা ভাগ্যকে পরিবর্তন করেঃ

আল্লাহ এই ভাগ্যের জন্য কিছু কারন তৈরী করে রেখেছেন যা এটিকে পরিবর্তন ও প্রতিরোধ করে। যেমনঃ দু‘আ, সতর্কতা অবলম্বন, নিজের কর্ম দক্ষতা ব্যবহার করা।

 

১৪.আসবাব বা কারন সমূহ গ্রহণ করাঃ

আল্লাহ তা’আলা কারো উপর বিপদ পতিত হওয়ার পূর্বেই বিপদ সম্পর্কে জানেন। এর অর্থ এই নয় যে, তিনিই বিপদগ্রস্থ ব্যক্তিকে বিপদে পতিত করেছেন, বরং এই বিপদ পতিত হয়েছে এর নির্ধারিত কারণ সমূহের দ্বারাই। যদি বিপদগ্রস্থ ব্যক্তি ইসলামী শারীয়াহ অনুমোদিত বিপদ হতে রক্ষাকারী মাধ্যম পরিত্যাগ করার কারনে বিপদে পতিত হয়, তবে সে নিজেকে হিফাযাত না করার কারনে ও বিপদ হতে রক্ষাকারী মাধ্যম গ্রহণ না করার কারনে দোষী হবে।

আর যদি এই বিপদ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা তার না থাকে, তবে সে মা’জুর হবে।

সুতরাং মাধ্যম গ্রহন করা ভাগ্য ও ভরসার পরিপন্থি নয় বরং এটি ভাগ্য ও ভরসারই অন্তর্ভূক্ত।

আর যখন ভাগ্য পতিত হয়ে যায়, তখন তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা ও তা মেনে নেয়া ওয়াজিব হয়ে যায় এবং এই কথার দ্বারা আশ্রয় গ্রহণ করবেঃ “‘ক্বদ্দারুল্লাহ ওয়ামা শা-আ ফাআ’লা’-(আল্লাহ যা নির্ধারন করেছেন ও চেয়েছেন তাই চেয়েছেন)”।

তাই বিপদ-মুসীবাত আসার পূর্বেই শারীয়াহ অনুমোদিত মাধ্যম গ্রহণ করা ও ভাগ্যের দ্বারা ভাগ্যের প্রতিরোধ করা।

নাবীগন নিজেদেরকে শত্রু থেকে হিফাযাতকারী পদ্ধতি ও মাধ্যম গ্রহণ করেছিলেন, অথচ তাঁরা আল্লাহর ওয়াহী ও নিরাপত্তা দ্বারা সাহায্যপ্রাপ্ত ছিলেন।

“দুর্বল মু’মির অপেক্ষা আল্লাহর কাছে অধিক উত্তম ও প্রিয়, তবে উভয়ের মাঝে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। যা তোমাকে উপকার করবে তা আদায়ে তুমি অগ্রশীল হও। আর আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা কর অপারগতা প্রকাশ করোনা। তোমাকে কোন বিপদ স্পর্শ করলে তুমি বলোনা যে নিশ্চয়ই আমি এই কাজ করলে এই এই হতো বরং তুমি বলঃ

“‘ক্বদ্দারুল্লাহ ওয়ামা শা-আ ফাআ’লা’-(আল্লাহ যা নির্ধারন করেছেন ও চেয়েছেন তাই চেয়েছেন)”।

কারণ (লাউ)যদি কথাটি শাইত্বানের কর্ম খুলে দেয়।’”

{মুসলিম}

 

১৫. ভাগ্যকে অস্বীকার কারীর বিধানঃ

যে ব্যক্তি ভাগ্যকে অস্বীকার করল সে ইসলামী শারীয়াতের মূলনীতি সমূহের একটি অন্যতম মূলনীতিকে অস্বীকার করলো। আর এর মাধ্যমে সে কুফুরী করলো।

আল্লাহ আমাদের কুফুরী থেকে হিফাযত রাখুন। আমীণ

সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আল্লাইলাহা ইল্লা আনতা আসতাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইক……



https://www.somewhereinblog.net/blog/baithulIlm/30083690